January 4, 2025, 4:25 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন ভিসানীতি বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার কমাবে বলে আশাবাদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। একইসঙ্গে এই ভিসা নীতির কারণে জ্বালাও-পোড়াওয়ের রাজনীতি বন্ধ হবে বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোমেন এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভিসা (যুক্তরাষ্ট্রের) নেয় বড়লোকরা, সরকারি কর্মচারীরা, কিছু বড় ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, রাজনীতিবিদ, যাদের ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়ে, যারা বিদেশে বাড়ি বানিয়েছেন, যারা টাকা পাচার করেছেন। এতে হয়তো আশা করি টাকা পাচার কমবে।’
‘কারণ ওনারা টাকা নিয়ে গিয়ে সেখানে স্থাপনা তৈরি করেন। আর যারা গরিব লোক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্ট হয়, তারা তো ভিসার জন্য আসেই না’, যোগ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভিসানীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো আবেদন করবেন কি না—এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আবেদন করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য যা যা করার দরকার—সেই ইনস্টিটিউশন ডেভেলপ করেছি। আমরা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করব। সেখানে অন্য লোক সাহায্য করলে ভালো, না করলেও উই আর কমিটেড টু ইট (আমরা এটা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ)।’
ড. মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সব সময় ভিসা তাদের নিজের দায়িত্বে দেয়, এটি চলে আসছে।ৃএতে প্রভাব পড়বে না। তবে আমি খুশি হব এজন্য যে তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চান, সেটিই সাহায্য করার জন্য তারা তাদের এই ভিসানীতি প্রচলন করেছে।’
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সম্প্রতি ওই ভিসানীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই নীতির আওতায় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িতদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে এ নীতি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভিসানীতি অনুযায়ী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাইব এই ভিসানীতির আওতায় জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করো। কারণ যারা একবার জ্বলেছে এবং জীবিত আছে, তাদের চেহারা দেখে আপনি বড় দুঃখ পাবেন। আমরা আর জ্বালাও-পোড়াও চাই না। তিন হাজার ৮০০ গাড়ি-ঘোড়া জ্বালিয়েছে, বগি-স্টিমার জ্বালিয়েছে। এই আইনের কারণে যদি জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ হয়, দ্যাট উড বি অ্যা ব্লেসিং (এটা কল্যাণকর হবে)। জ্বালাও-পোড়াও কারা করে আপনি জানেন। যারা করেন তাদের সতর্ক হওয়া দরকার, তাদের লিডারশিপের (নেতৃত্ব) সতর্ক হওয়া দরকার।’
মোমেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পূজারী। আমরা এ দেশে গণতন্ত্রকে রিএস্ট্যাবলিশ (পুনর্প্রতিষ্ঠিত) করেছি। আমরা গণতন্ত্রের মধ্যে সব সময় নির্বাচিত হয়েছি। এ দেশে যারা গণতন্ত্রের বাইরে নির্বাচিত হয়েছে ভোটারবিহীন নির্বাচনে, তাদের (১৯৯৬ সালে) দেড় মাসের মধ্যে ফেলে দিয়েছে পাবলিক।’
জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকার না হলে টিকতে পারবে না, ধ্বংস হয়ে যায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই নমুনা দেখেছেন বাংলাদেশে। আমরা জনগণের ওপর বিশ্বাস করি, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, আমাদের অন্য কোনো স্বার্থ নেই। মানুষের যেন মঙ্গল হয়…মানুষের মঙ্গল হয় বলে নিশ্চয়ই মানুষ আমাদের সাহায্য করবে। কারণ এই সাহায্য তার নিজেকে করবে।’
চীনের পররাষ্ট্রবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার সান ওয়েইডংয়ের বাংলাদেশে আসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আসুক। আসবেন—এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সবাই আসবে।’
Leave a Reply